সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকার পরও রাজধানীর খুচরা বাজারে আরেক দফা বেড়েছে ভোজ্যতেল ও ডালের দাম। এ ছাড়া নতুন করে না বাড়লেও বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে চাল। সব মিলে বাজারে এসব পণ্য কিনতে ভোক্তার নাভিশ্বাস উঠছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার ও শান্তিনগর কাঁচাবাজার ঘুরে ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার পণ্যমূল্য তালিকায় বৃহস্পতিবার তেল ও ডালের মূল্য বৃদ্ধির চিত্র দেখা গেছে। মূল্য তালিকায় টিসিবি বলছে, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনে দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। পাশাপাশি পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিনের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৭১ শতাংশ। এ ছাড়া খোলা সয়াবিনে লিটারপ্রতি বেড়েছে শূন্য দশমিক ৬৮ শতাংশ। তবে বাজারে এর চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে বোতলজাত সয়াবিনের দাম। সূত্র আরও জানায়, রাজধানীর খুচরা বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে মসুরের ডালের দাম আরেক দফা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রতিকেজি বড় দানার মসুর ডালের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। খুচরা বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১৬৫ টাকা। যা সাত দিন আগে ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ৭৬৫ টাকা। যা সাত দিন আগে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কয়েকটি সুপারশপ ও ই-শপ/ই-কমার্স সাইট-এ তা ৮০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা, যা সাত দিন আগে ১৪৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এদিকে সরকার ব্যবসায়ীদের ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে বারণ করলেও এ নির্দেশ বিক্রেতারা মানছে না। ব্যবসায়ীদের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের পর ৬ জানুয়ারি বৈঠকে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে না বলে সিদ্ধান্ত দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তারপরও সে সময় রাজধানীর খুচরা বাজারে এক দিনের ব্যবধানে লিটারে ২ থেকে ৫ টাকা বাড়তি দরে ভোজ্যতেল বিক্রি হয়েছে। ১৯ জানুয়ারি বুধবার বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আগামী ১৫ দিনে তেলের দাম বাড়ানো যাবে না। কিন্তু তখন এক দিনের ব্যবধানে বৃহস্পতিবার লিটারে সর্বোচ্চ ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ভোজ্যতেল। সে সময় প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন ৩-৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ১৪৫-১৪৮ টাকায়। সবশেষ বৃহস্পতিবার রাজধানীর খুচরা বাজারে লিটারে ৪-৭ টাকা বাড়তি দরে বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে। দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে নয়াবাজারের মুদি বিক্রেতা মো. তুহিন বলেন, মোকাম থেকে সব ধরনের ভোজ্যতেলের দাম আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে। যে কারণে পাইকারি ও খুচরা বাজারে তেলের দাম বেড়েছে। কিন্তু মোকামে তেলের কোনো সংকট নেই। তারা বলছে বিশ্ববাজারে দাম বেশি, যে কারণে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। রাজধানীর খুচরা বাজারে সব ধরনের চাল বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিকেজি সরুজাতের চাল ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি আকারের প্রতিকেজি চাল ৫২ থেকে ৫৭ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর মোটা জাতের চাল প্রতিকেজি ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। রাজধানীর শান্তিনগর কাঁচাবাজারের খালেক রাইস এজেন্সির মালিক ও খুচরা চাল বিক্রেতা মো. দিদার হোসেন বলেন, মিলমালিকদের কারসাজিতে দেশে সব ধরনের চালের দাম বাড়তি। তারা মিল পর্যায় থেকে সব ধরনের চালের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। যে কারণে পাইকারি বাজার থেকে বাড়তি দরে চাল এনে বিক্রি করতে হচ্ছে। কিন্তু ভোক্তারা আমাদের মতো খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি করছে। একই বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. সুমন বলেন, বাজারে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি। এর মধ্যে প্রতি সপ্তাহেই ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে। সঙ্গে আবার যোগ হয়েছে ডাল। এ ছাড়া চালের বাড়তি দরে নাভিশ্বাস উঠছে। সব মিলে করোনা পরিস্থিতিতে বাড়তি দরে পণ্য কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।