চালের পর এবার তেতে উঠেছে ডালের বাজার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের ডালের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। বিশেষ করে মোটা মসুর ডালের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ডালের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় আমদানি কমিয়ে দিয়েছে কিছু প্রতিষ্ঠান। যারা আনছে, তাদের বিক্রি করতে হচ্ছে বাড়তি দামে। আর এবার ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে দেশের অনেক ডালক্ষেত নষ্ট হয়ে যায়। এই সুযোগ নিয়েছেন মজুদকারীরা। সরবরাহ কমিয়ে ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছেন তাঁরা। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছে ভোক্তাসাধারণ। অন্যদিকে বাজারে চালের দামও বাড়তি। এরও আগে বেড়েছে তেল ও চিনির দাম। গতকাল পাইকারি চকবাজারে বড় দানার মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগে এই ডাল বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজি। ছোট দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগে ছিল ৯২ থেকে ৯৩ টাকা। পাইকারিতে খেসারির ডালের দাম ছিল ৪৭ থেকে ৫০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকা কেজি। মুগ ডাল ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি। ছোলার দাম কেজিতে দুই থেকে চার টাকা বেড়ে পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৪ টাকা। গতকাল সেগুনবাগিচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গরিবের বড় দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি। ছোট দানার মসুর ডাল ১১০ থেকে ১১৫ টাকা, এক সপ্তাহ আগে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা ছিল। এ ছাড়া মুগ ডাল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা কেজি, ছোলা ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজি শফি মাহমুদ বলেন, ‘গত ছয় মাস ধরে ডালের দাম বাড়ছে। তবে এ সপ্তাহে হঠাৎ এক সঙ্গে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। সম্প্রতি দেশে কয়েক দিন বৃষ্টি হওয়ায় অনেক ডালের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এতে মজুদদাররা বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। আগামী মৌসুমের ডাল উঠতে একটু দেরি হবে। আবার বড় আমদানিকারকরাও দাম বাড়িয়েছেন।’ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, গত অর্থবছরে মোট ডাল উৎপাদন হয়েছিল ৯ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১০ লাখ ৯৮ হাজার টন। উৎপাদন কম হয়েছিল এক লাখ ৬৫ হাজার টন বা ১৫ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ডালের উৎপাদন ছিল ১০ লাখ ৬৪ হাজার টন। সে হিসাবে গত বছর ডালের উৎপাদন কমেছে এক লাখ ৩৩ হাজার টন বা ১২ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুষম খাদ্যের চাহিদা মেটাতে মাথাপিছু দৈনিক ডাল প্রয়োজন ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম। সে হিসাবে দেশে বর্তমানে ডালের বার্ষিক চাহিদা ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টন। আমদানিকারকরা বলছেন, দেশের মসুর ডালের বাজার প্রায় পুরোটাই আমদানি নির্ভর। আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাস ধরে ডালের দাম বাড়ছে। আগে প্রতি টন মসুর ডালের দাম ছিল ৩০০ থেকে ৪০০ ডলার। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০০ থেকে ৭৫০ ডালারে। আন্তর্জাতিক বাজারে দফায় দফায় দাম বাড়তে থাকায় অনেক আমদানিকারক ডাল আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। গতকাল মিল গেটে বড় দানার মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ৮৫ থেকে ৮৬ টাকা কেজি, আর ছোট দানার (আমদানি/দেশি) মসুর ডাল ৮৯ থেকে ৯০ টাকা কেজি। টিকে গ্রুপের পরিচালক (মার্কেটিং) শফিউল আতহার তাসলিম বলেন, ‘বাড়তি দামে ডাল আমদানি করায় দেশের বাজারেও দাম বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত আছে। এ কারণে সামনে দাম আরো বাড়তে পারে। বর্তমানে প্রতি টন ডাল আমদানিতে গড়ে দাম পড়ছে ৬১ হাজার ৬০০ টাকা।’