বাজারে আসছে নতুন পেঁয়াজ(মুড়িকাটা)। তারপরেও হঠাৎ করেই রাজধানীর বাজারগুলোতে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকহারে বেড়ে গেছে। দুদিনেই কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। ভোক্তার অভিযোগ এ সময় দাম বাড়ার কোন কারণ নেই। দেশি পেঁয়াজের মজুত ফুরিয়ে আসায় পেঁয়াজের এই দাম বেড়েছে বলে অভিমত ব্যবসায়ীদের। জানা গেছে, প্রায় তিন বছর ধরে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম সবচেয়ে বেশি উঠানামা করছে। আমাদের দেশের পেঁয়াজের বাজার মূলত ভারতের বাজারের উপর নির্ভর করে। ভারতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০ টাকা বাড়লে বাংলাদেশের বাজারে বৃদ্ধি পায় ৩০ টাকা। বন্যা কিংবা অন্য কোন দুর্যোগ হলেই দাম বেড়ে যায়। কিন্তু সেটি হয়ে থাকে সাধারনত জুন- জুলাই মাসে। কোন সময়ই ডিসেম্বর মাসে পেঁয়াজের দাম বাড়েনি। কি কারণে শীতের মওসুমে পেঁয়াজের দাম বাড়লো তার কোন হিসাব মিলছে না। আমদানিকারক বলেন, আমরা হিলি স্থলবন্দরে যে পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৪৫ থেকে ৪৭ টাকায়, তা ঢাকায় হয়ে যাচ্ছে ৭০ টাকা। এর মূল কারণ, অতি মুনাফালোভী কিছু ব্যবসায়ী ও ফড়িয়া। বন্দরে পাইকারিতে বিক্রি করছি ৪৫ থেকে ৪৭ টাকা। যেসব পাইকার বন্দর থেকে গাড়িভাড়া দিয়ে পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন তারা মোকামে বিক্রি করছেন ৫৫ টাকায়। তাদের কাছ থেকে তৃতীয় পক্ষ নিয়ে গিয়ে সেই পেঁয়াজ বিক্রি করছে ৬০ টাকায়। খুচরা পর্যায়ে ডালিতে বিক্রি করছে ৭০ টাকা কেজি দরে। হিলির পেঁয়াজ আমদানিকারক মাহফুজার রহমান বলেন, চলতি মৌসুমে ভারতের যেসব অঞ্চলে পেঁয়াজ উৎপাদন বেশি হওয়ার কথা, সেখানে উৎপাদন কম হয়েছে। এর ওপর সম্প্রতি অতিবৃষ্টি ও বন্যায় কিছু অঞ্চলের পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। তাই সেখানে পেঁয়াজের সরবরাহ কমে দাম বাড়তির দিকে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন হিলি দিয়ে ৪০ থেকে ৫০ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হওয়ার কথা। কিন্তু সেখানে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ ট্রাক। হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। আমদানি কিছুটা বেড়েছে। গত সপ্তাহে বন্দর দিয়ে পাঁচ থেকে ১০ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হতো। বর্তমানে ২০ থেকে ২৫ ট্রাক আমদানি হচ্ছে। এর আগে জুন জুলাইতেও বেড়েচিল পেঁয়াজের দাম। সে সময় ব্যবসায়ীরা বেশ কিছু পেঁয়াজ আমদানি করে। সে সময় পেঁয়াজ সেঞ্জুরি করে। করোনার কারণে আমদানি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় দাম বেড়েছিল। প্রায় তিন মাস সীমান্ত বন্ধ ছিল। এসব কারণেই তখন দাম বেড়েছিল। কিন্তু এখন কি কারণে দাম বেড়েছে তার কোন উত্তর নেই। দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা মজুদের খোড়া যুক্তি দাড় করিয়েছেন। গত এক মাস ধরেই বাজারে পেঁয়াজ পাতা(মুড়ি কাটা) এসেছে। এ পেয়াজ ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এ পেঁয়াজ দিয়ে দুটি কাজই হয়ে থাকে। একদিকে গোড়ায় থাকার পেঁয়াজ দিয়ে তরকারি রান্না করা যায় অন্যদিতে পাতা দিয়ে সবজি খাওয়া যায়। আর এ করণেই বাজারে পুরাতন পেঁয়াজের চাহিদা কমেছে। তারপরেও পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু কি কারণে তার কোন উত্তর নেই। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশি পেঁয়াজের যে মজুদ ছিল তা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। এ কারণে এখন পেঁয়াজের দাম বাড়তি। তবে মুড়ি কাটা (পাতাসহ) পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। তাই এবার পেঁয়াজের দাম খুব বেশি বাড়ার সম্ভাবনা কম। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা মান অনুযায়ী দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি করছেন ৭০ থেকে ৮০ টাকা। যা দুদিন আগে ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। দেশি পেঁয়াজের পাশাপাশি দাম বেড়েছে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের। দুদিন আগে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আমদানি করা পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। পেঁয়াজের এই দামের বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়া বৌবাজারের ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর বলেন, দুদিন আগে দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি করেছি ৬০ টাকা করে। এখন সেই পেঁয়াজের কেজি ৭৫ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। হঠাৎ করেই পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। তাই আমরা বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। খিলগাঁও বাজারের ব্যবসায়ী সোহেল রানা বলেন, গত দুই দিনে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। বাড়তি দামে কেনার কারণে আমরাও বেশি দামে বিক্রি করছি। দুদিন আগে দেশি পেঁয়াজের কেজি ছিল ৬০ টাকা, এখন সেই পেঁয়াজের কেজি ৮০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ কি- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, পাইকাররা বলছেন দেশি পেঁয়াজের মজুদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। গোডাউনে খুব বেশি পেঁয়াজ নেই। এ কারণেই দাম বেড়েছে। এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, আমাদের ধারণা এখন পেঁয়াজের দাম বাড়লেও এবার খুব বেশি বাড়বে না। কারণ ইতোমধ্যেই বাজারে মুড়ি কাটা পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে নতুন পেঁয়াজ বাজারে চলে আসতে পারে। কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী লোকমান হোসেন বলেন, বাজারে এখন পেঁয়াজের আমদানি (সরবরাহ) কম, এ কারণে দাম বেড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার আমরা দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি করছি ৬২-৬৪ টাকা। আগে এই পেঁয়াজের কেজি বিক্রি করেছি ৪৭-৪৮ টাকা। এ হিসাবে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১৫-১৬ টাকা। তিনি বলেন, এখন বাজারে পেঁয়াজ কম তাই দাম বেড়েছে। বাজারে পেঁয়াজের আমদানি হলে (সরবরাহ বাড়লে) আবার দাম কমে যাবে। আমাদের ধারণা পেঁয়াজের দাম খুব বেশিদিন বাড়তি থাকবে না। কারণ অল্পদিনের মধ্যেই বাজারে নতুন পেঁয়াজ চলে আসবে। এদিকে একই চিত্র দেখা গেছে,রাজধানীর পাইকারি পেঁয়াজের আড়ৎ শ্যামবাজারে। এখনেও পেঁয়াজের দাম পাইকারিতে বেড়েছে কেজিতে ১৫-২০ টাকা। তারা বলছেন,পেঁয়াজের সরবরাহ কম হওয়াতে বাজারে দাম বেড়েছে। তারা বলছে আমরা এণসি খোলেও পেঁয়াজ পাচ্ছি না। তবে এ দাম বেশি দিন থাকবে না। বাজারে যেহুতু মুড়িকাটা পেঁয়াজ এসে গেছে তাই দাম কমে যাবে। দু এক সপ্তাহের মধ্যেই দাম ৪০-৪৫ টাকায় এসে যাবে। তারা আরও বলেন এ বছর শীতকালিন বৃষ্টির কারণে বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। এতে করে বাজার কিছু দিন চওড়া থাকতে পারে। মুড়িকাটা অনেক পেঁয়াজ বৃষ্টি কারণে নষ্ট হয়েছে। আর এ কারণেও দাম কিছুটা বাড়তে পারে। তবে সেটা স্থায়ী হবে না বলে তাদের ধারণা।