শারীরিক দুর্গন্ধকে মেডিক্যালের ভাষায় ব্রোমহাইড্রোসিস বলা হয়। এটা মানবজীবনের একটা স্বাভাবিক অংশ হলেও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে। তাই সবাই শরীরের দুর্গন্ধ দূর করতে চায়। শারীরিক দুর্গন্ধের জন্য অনেকে ঘামকে দোষারোপ করে থাকেন। কিন্তু ঘামের নিজস্ব গন্ধ নেই। মূলত শরীরের ঘর্মাক্ত অংশে বসবাসরত ব্যাকটেরিয়ার কারণে শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। তারপরও ব্যাকটেরিয়াকে শারীরিক দুর্গন্ধের একমাত্র কারণ বলা যাবে না। কোন ঘর্মগ্রন্থি থেকে কি পরিমাণে ঘাম বের হচ্ছে সেটার ওপরও শারীরিক দুর্গন্ধ নির্ভর করছে। শরীরের যেসব অংশে আর্দ্রতা বেশি তা হলো ব্যাকটেরিয়ার জন্য অনুকূল পরিবেশ, যেমন- বগল। যখন কেউ ঘামেন, ব্যাকটেরিয়া ঘামের কিছু প্রোটিনকে ভেঙে এসিডে রূপান্তর করে। এই বাই-প্রোডাক্ট থেকে দুর্গন্ধ বের হয়, ব্যাকটেরিয়া থেকে নয়। কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর শরীরকে দুর্গন্ধপ্রবণ করতে পারে, যেমন- শরীরের অতিরিক্ত ওজন, মসলাদার ও কড়া স্বাদের খাবার, ডায়াবেটিস, কিডনি সমস্যা, লিভার রোগ, অতিক্রিয়াশীল থাইরয়েড, বংশগত শারীরিক দশা, মানসিক চাপ ও অত্যধিক ঘাম নিঃসরণ। হঠাৎ করে শারীরিক গন্ধে পরিবর্তন অনুভব করলে চিকিৎসককে জানানো উচিত, কারণ এটা মারাত্মক রোগের লক্ষণ হতে পারে। এখানে শরীরের দুর্গন্ধ কমানোর কিছু উপায় দেয়া হলো।
* প্রতিদিন গোসল করুন: প্রতিদিন কমপক্ষে একবার গোসল করলে শারীরিক দুর্গন্ধ কমে যাবে। গোসলের সময় সাবান বা শাওয়ার জেল ব্যবহার করুন ও সারা শরীরকে ফেনায়িত করুন, বিশেষ করে দুর্গন্ধপ্রবণ স্থান। উষ্ণ, আর্দ্র পরিবেশে প্রতিদিন দুইবার গোসল করতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ভেজা কাপড় দিয়ে বগল, কুঁচকি ও ত্বকের ভাঁজ মুছে নিলেও দুর্গন্ধ কমবে। ব্যায়ামের পর অথবা শরীর ঘামে ভিজে গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গোসল করে ফেলুন।
* বগলে সঠিক প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন: বগলে উপযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করলেও দুর্গন্ধ কমে যাবে। ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করলে বগলের পরিবেশ ব্যাকটেরিয়ার জন্য প্রতিকূল হতে পারে। এই প্রোডাক্ট বগলের দুর্গন্ধকে সুবাস দিয়ে ঢেকে দেয়। অন্যদিকে অ্যান্টিপারস্পিরেন্ট ঘাম নিঃসরণ কমাতে ঘাম গ্রন্থিকে ব্লক করে। আপনার শরীর থেকে বেশি ঘাম ঝরলে এমন প্রোডাক্ট কিনুন যার লেবেলে অ্যান্টিপারস্পিরেন্ট ও ডিওডোরেন্ট উভয় রয়েছে। তেমন ঘাম বের না হলে কেবল ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করতে পারেন। আপনার জন্য সঠিক অ্যান্টিপারস্পিরেন্ট/ডিওডোরেন্ট কিনতে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন নিতে পারেন। তিনি প্রয়োজনে আরো শক্তিশালী প্রোডাক্ট প্রেসক্রাইব করবেন।
* লোম পরিষ্কার করুন: শরীরের যেসব স্থানে লোম বেশি সেখানে অ্যাপোক্রাইন গ্রন্থিও বেশি, যেমন- বগল ও জননাঙ্গ। লোমগুলো ঘাম ধরে রাখে ও ব্যাকটেরিয়া বসবাসের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। তাই নিয়মিত লোম কেটে ফেললে শারীরিক দুর্গন্ধ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এসব উপায় অনুসরণের পরও শরীর থেকে বেশি করে ঘামের দুর্গন্ধ বের হলে চিকিৎসককে জানাতে ভুলবেন না।